এবিএনএ: আওয়ামী লীগকে ‘ভয়ানক’ দল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার নয়। এরা শাসক। এরা ভয়ানক দল। এরা ঘোষণা দেন বিএনপি তাদের শত্রু। একটি রাজনৈতিক দল একথা বলতে পারে না। তাদেরকে বিদায় না করা পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না।’
শনিবার দুপুরে বিএনপির গণঅনশন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির শুরু হয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে তিন ঘণ্টার এ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে দলটি। মির্জা ফখরুল ফলের রস খাইয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের গণঅনশন ভাঙান। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হলেন— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান।
ফলের রস খেয়ে অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী ও এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে নেত্রী গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজীবন ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন তিনি আজ বন্দি। আজকে এ অনশনে সকল রাজনৈতিক দল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন এবং শপথ করেছেন এ সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবে না।’
‘আওয়ামী লীগ সরকার নয়, এরা শাসক। এরা ভয়ানক দল। এরা ঘোষণা দেন বিএনপি তাদের শত্রু। একটি রাজনৈতিক একথা বলতে পারে না। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। এরা কমান্ডো কায়দায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গোটা বিশ্ব এদেরকে সরে যেতে বলছে। এদের অত্যাচার অবিচারে দেশবাসী আজ অতিষ্ট। এরা কাউকে পাত্তা দেয় না। এরা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’
‘আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি অবিচ্ছেদ্য অংশ। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। আজকে দেশকে বাঁচাতে হলে, অর্থনীতিতে বাচাতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।’
বিএনপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে দলের মহাসচিব বলেন, ‘তাই পুজায় আমরা কোনো কঠিন কর্মসূচি রাখিনি। সরকার নিজেরা পুজা মণ্ডপে হামলা চালিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাবে। এগুলো তাদের অতীত ইতিহাস। গতকাল তারা হিন্দু খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভায় হামলা চালিয়েছে।’
এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, ‘আজকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কেন চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে? আজকে কেন তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক রাখা হচ্ছে?’
‘কারণ, বেগম জিয়া বাইরে থাকলে এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আজকে ৮৫ বছর বয়সেও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। আজ দেশকে রক্ষা করার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,‘ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এমন কোনো কাজ নেই যে আমরা করি নাই। আবেদন করেছি, সমাবেশ করেছি, আন্দোলন করেছি। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হত্যা করার জন্য। তাকে ভুয়া মামলায় আটক করা হয়েছে। একই মামলায় আ স ম রব, মায়া চৌধুরী, হাজী সেলিমসহ সবাইকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
‘এখনও সময় আছে বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। যদি উনাকে বিদেশে পাঠান তাহলে তাকে যে স্লো পয়জিং করা হয়েছে তার জন্য হয়ত মাফ করে দিবো। যদি না পাঠান তাহলে এই স্লো পয়জিংয়ের জন্য নতুন প্রজন্ম আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে সাবেক সিইসি নুরুল হুদা ও কাজী রকিব উদ্দীনের বংশধর উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আপনি কথা কম বলেন। আপনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আপনারা সেই সাহস নেই। আপনিও শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশনে কাজ করে যাবেন। শেখ হাসিনা কখনও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করতে দিবে না। তাকে আটক করা হয়েছে হত্যা করার জন্য।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘তোমরা লাঠিসোটা নিয়ে রেডি থাকো। এদেশকে মুক্ত করার জন্য। আমরা কাউকে ভয় পাই না। রাজপথে যদি আঘাত আছে তা প্রতিরোধ না করতে পারি তাহলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না।’
‘আজকে সাক্ষী নেই, মামলার মেরিট নেই সেসব মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। বিচারের নামে অবিচার হচ্ছে। আমরা আপসহীন নেত্রীর আপোষ কর্মী লড়াই করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারী সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে আটক করে রেখেছে সেটা হতে পারে না। এরা দেশে বাকশালি শাসন কায়েম করেছে। এর বিরুদ্ধে আজ সবাই এক হয়েছে। এ অবস্থা দেশের মানুষ মেনে নিতে পারে না। এরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এরা যে লুট ও দূর্নীতি করেছে তা শুধু দেশের মানুষ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একজন মানুষ অসুস্থ হলে তার সুচিকিৎসার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দেশনেত্রীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এবারের লড়াই বেচে থাকার লড়াই, সবার লড়াই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘সারাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। এ সরকারের বিদায় করার জন্য দেশবাসী প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন শুধু নির্দেশ। নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে এ দেশে এমন আন্দোলন শুরু হবে যাতে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মসনদ ভেঙে তছনছ হয়ে যাবে।’
সভাপতি বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়াকে বাঁচানো যাবে না, দেশ বাচানো যাবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সমমনা দলগুলোর নেতারা বক্তব্য রাখেন এবং এই গণ অনশনে সংহতি প্রকাশ করে একাত্মতা ঘোষণা করেন মোস্তফা জামাল হায়দার, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাইফুল হক, খন্দকার লুৎফর রহমান, নূরুল হক নূর, এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, ববি হাজ্জাজ, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেয়র মজিবুর রহমান, ক্বারি আবু তাহের, ড. নাজমুল করিম খান, প্রফেসর মুর্শেদ হাসান, কাদের গনি চৌধুরী, রাশেদুল হক, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক, আনম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।